নিউটন এর জীবনে আরো কিছু মজার ঘটনা!
রয়েল সোসাইটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে কার প্রভাব সবচেয়ে বেশী এ প্রশ্ন নিয়ে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করেসিল ২০০৫ সালে । ভোটের ফলাফলে সব আইনস্টাইনদের হারিয়ে জিতে যান ইতিহাসের এই রোগা বালক।১৬৪৩ জন্মলগ্ন থেকে তিনি ছিলেন রোগা প্রকৃতির। অথচ স্কুলে দুষ্টমিতে সেরা ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিক্ষকগণ মুগ্ধ ছিল তাঁর অসাধারণ জ্ঞান-প্রতিভায়। মূলত নিউটনের আগ্রহ ছিল গণিত ও বলবিজ্ঞানের উপর।তিনি ছিলেন একাধারে পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দার্শনিক, আলকেমিস্ট।নিউটন এর জীবনে কিছু মজার ঘটনা নিয়ে আজকের আয়োজন। ....
-----------------------------------------------------------------------
বিজ্ঞানী ও সাধকগণ কখনো কখনো এমন আত্মমগ্নতায় বিভোর হন যেনো সবকিছুই ভুলে যান সেই সাধনার মুহূর্তে।এমনিভাবে নিউটন কোন নতুন বৈজ্ঞানিক ভাবনায় ডুবে থাকতেন। একদিনের ঘটনা। একজন লোক তাঁর বাড়িতে এসে একটা প্রিজম (তিনকোণা কাঁচ) দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এর দাম কত হতে পারে। সেই ব্যক্তি নিউটনের কাছে এই প্রিজমটি বিক্রির জন্যই এসেছিল। এ সময় নিউটন প্রিজমের বৈজ্ঞানিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে বললেন, এর প্রকৃত মূল্য নির্ণয় করা তাঁর সাধ্যের বাইরে। ফলে লোকটি বেশি দাম চাইল। নিউটন সেই দামেই প্রিজমটি কিনে ফেললেন। তোমরা জেনে অবাক হবে, পরবর্তীকালে এই প্রিজম থেকে তিনি উদ্ভাবন করেন বর্ণতত্ত্ব (The theory of color)...{hsc লেভেলের বইএ সিলো প্রিজমের বর্ননা। .মনে আসে ?]
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আরএকদিনের এক ঘটনা। ছোট্র নিউটন লক্ষ্য করলেন, স্কুলের অধ্যক্ষের শ্যালক প্রায়ই স্কুলে আসতে দেরি করতেন। চিন্তা করতে করতে হঠাৎ তাঁর মাথায় বুদ্ধি আসলো। সেই মুহূর্তে নিউটন বলে ওঠলেন, স্যার আপনার জন্য একটা ঘড়ি তৈরি করে দিচ্ছি যা দিয়ে ঠিক সময়ে স্কুলে আসতে পারবেন। কিন্তু নিউটন ঘড়িটা তৈরি করলেন কিভাবে? তিনি যে ঘড়িটা তৈরি করলেন সেই ঘড়ির উপরে থাকতো পানির পাত্র। প্রতিদিন নির্দিষ্ট ফোঁটা ফোঁটা পানি ঘড়ির কাঁটার উপরে পড়ত। এর ফলে ঘড়ির কাঁটা আপন গতিতে এগিয়ে চলতো সামনের দিকে। এভাবে সময় গণনা করা হতো!
-----------------------------------------------------------------------
একবার নিউটন তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বাসায় নিমন্ত্রণ করলেন। তারপর যথারীতি ভুলে গেলেন। কিন্তু বন্ধুটি দুপুরে সময়মতো নিউটনের বাসায় এসে দেখেন তিনি নেই। টেবিলে ঠিকই খাবার সাজানো রয়েছে। বন্ধুটি ভাবলেন, নিউটন হয়তো জরুরী কোন কাজে বাসার বাইরে গিয়েছেন, খবর দেয়ার সুযোগ পায়নি। তাই বন্ধুটি দেরী না করে টেবিলে ঢাকা খাবার খেয়ে নিয়ে নিউটনের বিছানায় দিব্যি ঘুম দিলেন। এদিকে নিউটন বাসায় ফিরে দেখলেন তাঁর বন্ধুটি বিছানায় ঘুমাচ্ছে। নিউটন কিছুটা অবাক হয়ে ভাবলেন, তবে কি তিনি ভুল করে নিজের বাসায় না এসে বন্ধুর বাসায় চলে এলেন? কিন্তু টেবিলে ঢাকা খাবার দেখে পরক্ষণেই বুঝলেন তিনি নিজের বাসাতেই আছেন। বন্ধুটি খাবারের পর খালি পাত্রগুলো আবার তেমনই সাজিয়ে রেখেছিলেন। নিউটন খেতে গিয়ে দেখলেন সব খালি। তখন তিনি ভাবলেন যে তিনি নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছেন যে তিনি আগেই খাবার খেয়ে বেরিয়েছিলেন।
তাই নিশ্চিন্ত মনে তিনি কাজে ডুবে গেলেন।
------------------------------------------------------------------------
১৬৪৭ সালে নিউটনের Philosophiac Naturalis pricipia Mathmatica প্রকাশিত হয়।১৬৮৪-১৬৮৬ সালে তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘প্রিন্সপিয়া’।১৬৮৭ সালে স্যার আইজাক নিউটন মহাবিশ্বের যে কোন দুটি বস্তুর মধ্যকার আকর্ষন বলকে একটি সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেন। এটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত। ১৭০৩ সালে নিউটন পেলেন এক অভূতপূর্ব সম্মান। তিনি রয়াল সোসাইটির সভাপতি। আমৃত্যু তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে তিনি বলেছিলেন:
“আমি জানিনা বিশ্বের কাছে আমি কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছি, কিন্তু আমার কাছে আমার নিজেকে মনে হয় এক ছোট বালক যে কেবল সমুদ্র উপত্যকায় খেলা করছে এবং একটি ক্ষুদ্র নুড়ি বা ক্ষুদ্রতর এবং খুব সাধারণ পাথর সন্ধান করছে, অথচ সত্যের মহাসমুদ্র তার সম্মুখে পড়ে রয়েছে যা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেল। ”
১৭২৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ তারিখে ৮৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে-তে সমাধিস্থ করা হয়। কেও কখনো লন্ডন বেড়াতে গেলে এই মহান বিজ্ঞানীর সমাধি দেখতে যেতে ভুলবেন না যেনো !
নিউটনকে নিয়ে আমাদের আগের পোস্ট http://banglarkolom.blogspot.com/2014/03/blog-post_7814.html

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন